রুবেল আহামেদ
ষ্টাফ রিপোর্টার, ফ্রি-ল্যান্সার লেখক ও কলামিস্ট।
৫ই আগষ্ট ২০২৪ইং, ছাত্র ও জনগণের গণ অভূথ্যানে বাংলাদেশ থেকে এক গভীর আমাবস্যার অন্ধকার কেটে গেছে। এখনও যেন তার রেশ রয়ে গেছে বাংলাদেশের ভাগ্যেকাশের কক্ষপথের দ্বারে দ্বারে। ঠিক সেই কক্ষ পথেই ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের মতো আলোকবর্তিকা হাতে একজন পৌড় ব্যক্তি আরো কয়েকজন সারথীকে সাথে নিয়ে ছুটে চলেছেন এক সংকটকালীন জাতিকে আলোর পথ দেখাতে। তিনি আর কেউ নন বিশ্ব দরবারে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত শান্তিতে নোবেল জয়ী আমাদের ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ অন্তর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
যার হস্তক্ষেপে অনেক প্রকল্প আওয়ামী বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের উর্ধ্বগগণে পাখা মেলতে শুরু করেছে। অনেক স্বপ্ন ডানা মেলেছে বাংলাদেশের মুক্ত আকাশে। যা এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষার সাময়িক প্রহর মাত্র।
গ্রাম,শহর, বন্দর আর নগরের চায়ের দোকানের টকশোতে কেবল ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যারের নাম। কতিপয় রাজনৈতিক দলের অস্থির রাজনৈতিক চাপে নিজের আবেগের সর্বচ্চো গতি দিয়ে তিনি পদত্যাগ করতেও পিছপা হননি।
বাংলাদেশের মানুষ ও কতিপয় রাজনৈতি দলের ঠিক ততটুকু গতি দিয়েই ঠেকিয়েছিলেন তার সেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত। তাদের ভাষায়, ‘আপনি কেবল আপনার ড. ইউনুস নন, আপনি বাংলাদেশের ইউনুস, আপনিই বাংলাদেশ, আমাদের সকলের উপদেষ্টা, দেশের সংকটকালীন অভিভাবক। আপনি আছেন বলেই আমরা আমাদের দানব প্রতিবেশি দেশের সাথে মিন মিন করা ছেড়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারি। যে সাহসে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সাহস করি। কারন, আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ চিন রয়েছে সাথে, যারা আপনাকে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন। সাথে রয়েছে ১৯৭১ সালে আলাদা হয়ে দূরে সরে যাওয়া সহদর ভাই পাকিস্তান। যার জনগণ এখনও আমাদের তাদেরই আপন রক্তের সহদর মনে করে টান অনুভব করে।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার যখন তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং স্বকিয়তায় একাই একশ হয়ে দূর্বার গতিতে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে বদ্ধ পরিকর। ঠিক তখনই সন্ধ্যার কোন এক ব্যস্ত চায়ের দোকানের এল.ই.ডি টিভির পর্দায় ডা. শফিকুর রহমান, যিনি বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমীরের প্রধান হয়ে সকল ইসলামী দলের ঐক্যর বিষয়ে কোন এক বেসরকারী টিভি চ্যানেলে ভাষণ দিচ্ছিলেন,‘আসুন আমরা সবাই এক ছাদের তলায় ভেদাভেদ, বিভেদ ভূলে গিয়ে এক হয়ে বাংলাদেশটাকে গড়ি’। দর্শক সারীর প্রতিটি গরম চায়ের চুমুকের শব্দে যেখানে বিরক্তিকর পরিবেশ তৈরি হবার কথা, সেখানে এই একজন পাঁকা সুন্নতে লেবাসের অমায়িক ভদ্রলোকের কথায় সেই চায়ের কাপের চুমুকের শব্দ ম্লান হয়ে গেছে। সবার মনে একই আশা, একই স্বপ্ন। একটি ইসলামী গণপ্রজাতন্ত্রের বাংলাদেশের বাস্তবায়ন হয়তো ঘটতে পারে। যা কেবল সকল ইসলামী রাজনৈতিক দলের ঐক্যই পারে বলে অধিকাংশ সাধারণ জনগণ মনে করেন। বাংলাদেশের মানুষ সকল রাজনৈতিক দলের দেশ পরিচালনা দেখেছে। যেখানে মুখের বুলি ছিলো, মিষ্ট মিষ্ট ভাষণ ছিলো, জনগণের নিখাদ হাত তালি ছিলো। শুধু কোন ক্ষমতাসিন দলের ছিলোনা উন্নয়নশীল দেশের তকমা থেকে সরে এসে উন্নত এক রাষ্ট গড়ার আত্ব-প্রত্যয়ী মনোভাব। বিনিময়ে বাঙ্গালী জাতি কেবল দেখেছে শাষনের নামে শোষণ, উন্নয়নের নামে দূর্নীতি, এগিয়ে যাওয়ার নামে পিছিয়ে যাওয়া, গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, আর টেন্ডারবাজী। বাংলাদেশী সকল স্তরের জনগণ সবাইকে, সব দলকেই দেখলো, শুধু আজও দেখেনি কোন ইসলামীক দলের শাষণ ব্যবস্থ্যা। এবার তারা ইসলামী দলকেই ভোট দেবে বলে যখন মন স্থির করে ফেলেছে। ঠিক তখনই জনমনে একটাই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে অনেকটা
আতংকিত মনে! টিকবে কি এই ঐক্য?
জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট,খেলাফত মজলিস সহ বিভিন্ন ইসলামী দল গুলো বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইটে দেখা যায়।
কিন্তু, তাদের মধ্যে বর্তমানে ক-তটা ঐক্য হয়েছে বা রয়েছে জনমণে এখন সেটাই সব থেকে বড় প্রশ্ন। দলের সকলের মধ্যে মূলত মাযহাব ও আকিদার প্রশ্নেই ঐক্যর বিষয়টা শেষ অবধি অনৈক্য এবং মত-পার্থক্য দেখা দেয়, দেখা দেয় বিভাজন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন, যদি সকলে দেশের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে মতপার্থক্যর উর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখার পরিকল্পনায় ঐক্যমতে পৌছাতে পারেন, তবেই ইসলামী দল গুলো আগামী সংসদ নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেতে পারেন। নচেৎ বিরোধী দলেও তাদের কথা চিন্তা করা যাবেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাধারণ নাগরিক বলেন যে, ‘‘ইসলামী দল গুলোর ঐক্যকে মনে করা যায় একটি সংকর জাতির গাছ। যেখানে চারা গাছে অঙ্কুরোদগোম হবে। বিভিন্ন রংয়ের পাতা হবে, ডাল পালা হবে। যদি সে গাছের পরিচর্যা না হয়। তবে ফল হবে ঠিকই, কিন্তু‘ তা পোঁকায় খেয়ে ফেলবে। তাই তার পরিচর্যা করতে হবে। তবেই ভালো ফল আসবে।’’
বর্তমানে প্রতিটি দল বিশেষ করে ইসলামী দলগুলো তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী বাঁছাইয়ের কাজে ব্যস্ত। অনেক ইসলামী দল প্রার্থী বাছাই পক্রিয়ার কাজও শেষ করে ফেলেছেন। শেষ পর্যায়ে তারা আদৌও সে ঐক্যর বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছে কিনা, ভাবার বিষয়। তবে একটি সিদ্ধান্তে সবাই একমত হয়েছেন বলে জানা যায় যে, যে ব্যক্তি অন্য যে কোন ব্যক্তি থেকে যোগ্য বলে বিবেচিত হলে, সকল ইসলামী দল তাকে ইসলামী দল গুলোর ঐক্য’র স্বার্থে বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে সাহায্য করবেন। যদি সত্যিকারেই এরকম চিন্তা-ভাবনা সকল দলের প্রতিটি নেতৃবৃন্দের থাকে, তবে আমরা নিশ্চিত, দেশ সঠিক পথে থাকবে বলে বিশ্বাস করি।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার নির্বাচনি পরিবেশ তৈরিতে ওয়ান পার্সেন্ট ট্রলারেন্সও ছাড় দেবেন না, এটা নিশ্চিত। অনেক বাঁধা এসেছে। গত এক বছরে এ-ত দাবি দাওয়া নিয়ে, এ-ত মিছিলি, মিটিং। বিগত ১৫ বছরে কেউ করতে পেরেছে বলে মনে হয়না। একটা মানুষকে কাজ করার সুযোগ না দিলে কাজ ব্যাহত হবে, বিশৃংখলা হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা বিভিন্ন সময় গণ-মাধ্যম গুলোতে বিভিন্ন দলের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের ড. ইউনুস বিরোধি বক্তব্য দেখেছি, পড়েছি, শুনেছি। দুনিয়ার কোন মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্যার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট লোকজন ভুল করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিš‘, সাধারণ জনগণ বাদে, অধিকাংশ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মুখ থেকে গঠনমুলক সমালোচনা আসেনী। যা এসেছে, তাতে এটাই পরিষ্কার, তারা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের থেকে বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন, তাদের কেন সরকার প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে একটি বিষয় অনস্বীকার্য যে, অধিকাংশ জনগণ মনে করেন, আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের উপদেষ্টা মন্ডলীতে না রেখে তাদের সচিব পদ-মর্যাদায় রাখলে এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে চিরুনী অভিযান চালিয়ে সাবেক সরকারের পা চাটাদের বের করে দিলে বর্তমানে অন্তত্ব চলমান সমস্যা গুলোর সম্মুখিন সরকারকে হতে হতোনা।
যাদের সহায়তায় ভারত এখনও তার উৎপাত চালাচ্ছে, চালাবে, চালাতেই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। না চালালে, সে আবার কেমন প্রতিবেশি। তাই দেশের মানুষ এখন সামনের নির্বাচনে ঈমাণদার মুসলমান আলেম সমাজের দিকে তাকিয়ে। শাপলা চত্বরে যারা শহিদি কাফেলা উপহার দিতে পারে, তাদের কাছে এই দেশ নিরাপদ। সেখানে কোন সন্দেহ নেই, দেশের জনগণ তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। শেষ পর্যায়ে কোথায় নূহ (আঃ) মতো কিশতির মত কোথায় গিয়ে ঠেকে তাদের ঐক্য।