রাজকুমার ঘোষ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে টাঙ্গাইল জুড়ে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১২৪৭টি মণ্ডপ এবার পূজা উদযাপনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপ যেন নিজস্ব গল্প বলে—কোথাও ঐতিহ্য, কোথাও থিমে আধুনিকতার ছোঁয়া। উপজেলা ভিত্তিক বিশেষ আয়োজন মির্জাপুর (২৫৭ মণ্ডপ)
এখানে প্রতিটি মণ্ডপে থিম ভিত্তিক প্রতিমা তৈরির হিড়িক। শাসন ও ন্যায়ের প্রতীক, গ্রামীণ জীবন, পরিবেশ সচেতনতা—প্রতিটি প্রতিমা যেন তার নিজের গল্প বলে। ছোট ছোট শিশু থেকে বয়স্ক সবাই শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে দেখছে কল্পনার বুনন।
টাঙ্গাইল সদর (২১৪ মণ্ডপ)
টাঙ্গাইল সদর শহরের মণ্ডপগুলো আলোকসজ্জা প্রতিযোগিতার জন্য বিখ্যাত। প্রতিমার রঙের সঙ্গে মেলানো বাতির ঝলক যেন রাতের আকাশকে উদ্দীপ্ত করছে। ভক্তরা শোভাযাত্রার সাথে মিলিয়ে সাজানো আলোকপথে আনন্দে মাতোয়ারা।
কালিহাতি (১৬৩ মণ্ডপ)
কালিহাতিতে পুরোনো ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপে ব্যবহৃত হচ্ছে কাঠ ও কাদা—শতাব্দী প্রাচীন রীতির সঙ্গে মিল রেখে। ধুনুচি নৃত্য ও ঢাকার তালে উৎসব যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে।
নাগরপুর (১২৯ মণ্ডপ)
এখানকার মণ্ডপগুলোতে রয়েছে দেবী দুর্গার নানা রূপ—কিছুটা আধুনিক থিমের সঙ্গে ঐতিহ্য সংমিশ্রিত। শিল্পীরা প্রতিমায় সূক্ষ্ম কল্পনার ছোঁয়া যোগ করছেন, যেন প্রতিটি মণ্ডপ একেকটি গল্পের অধ্যায়।
দেলদুয়ার (১২৩ মণ্ডপ)
দেলদুয়ারে মণ্ডপগুলোতে থাকছে প্রাকৃতিক থিম—ফুল, পাতা, ও ফল দিয়ে সাজানো প্রতিমা যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মিলন দেখাচ্ছে। ভক্তরা আনন্দিত চোখে প্রতিমা প্রদর্শনী উপভোগ করছেন।
ঘাটাইল (৭০ মণ্ডপ)
এখানকার মণ্ডপে দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পূজাও হচ্ছে। ছোট ছোট মেলাবদ্ধ খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দর্শকদের মনে উৎসবের ছোঁয়া যোগ করছে।
বাসাইল (৭০ মণ্ডপ)
বাসাইলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকার ঢাকের ছন্দে পূজার আয়োজন। ঢাকের তালে তালে ভক্তরা খুশিতে ভেসে যাচ্ছেন।
গোপালপুর (৫৫ মণ্ডপ)
প্রতিমায় শিশু ও কিশোরদের অংশগ্রহণ বেশি। রঙিন পোশাক, ব্যান্ড পারফরম্যান্স ও স্থানীয় নৃত্য-গান এখানে প্রাণের উৎসব রূপে উপস্থাপিত হচ্ছে।
মধুপুর (৫৯ মণ্ডপ)
মধুপুরের মণ্ডপে দেবী দুর্গা ও কালী মিশ্রিত থিম। রাতে আলোকসজ্জার সঙ্গে প্রতিমার ছোঁয়ায় যেন ভক্তদের চোখের আনন্দ দ্বিগুণ হচ্ছে।
ভূঞাপুর (৩৭ মণ্ডপ)
গ্রামীণ জীবন ও কৃষিভিত্তিক থিমের প্রতিমা এখানে সবচেয়ে বেশি। শিশুদের জন্য ছোটখাটো পুজো খেলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন আছে।
সখিপুর (৩৫ মণ্ডপ)
সখিপুরে প্রতিমা শিল্পীরা বিশেষভাবে ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা করছেন। গ্রামের প্রতিটি মানুষ অংশ নিচ্ছে প্রস্তুতিতে—মহিলারা ফুল দিয়ে সাজাচ্ছেন মণ্ডপ, পুরুষরা মাটির কাজ করছেন।
ধনবাড়ী (৩৫ মণ্ডপ)
এখানে প্রতিমার রঙিন সাজ আর আলোকসজ্জার সমন্বয় দর্শনীয়। স্থানীয় স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা মণ্ডপে নৃত্য ও গান পরিবেশন করছে।
পূজার সময়সূচি (২০২৫)২৮ সেপ্টেম্বর(রবিবার) – মহাষষ্ঠী
২৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) – মহাসপ্তমী
৩০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) – মহা অষ্টমী
১ অক্টোবর (বুধবার) – মহানবমী
২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) – বিজয়া দশমী ও বিসর্জন নিরাপত্তা ব্যবস্থা
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক ও আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় সিসি ক্যামেরা, টহল ও চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।শুধু প্রতিমা নয়, টাঙ্গাইলের প্রতিটি মণ্ডপ যেন মানুষের কল্পনা ও সৃজনশীলতার গল্প বলছে। এবারের দুর্গোৎসব হবে আনন্দ, শান্তি ও সম্প্রীতির এক অনন্য উদযাপন।


















